গত বছরের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর সারাদেশের ন্যায় বাউফল উপজেলারও আইন-শৃঙ্খলাসহ সকল উন্নয়নমূলক কার্যক্রমও হয়ে পরে স্থাবির। জনগণ হয় সেবাবঞ্চিত। গোটা উপজেলা প্রশাসন যেন এলোমেলো দশা। এমন প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি শৃঙ্খলা ও জনসেবা নিশ্চিত করতে বাউফল উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব নেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম।
জানা যায়, বাউফলের ইউএনওর দায়িত্ব নেওয়ার পরে অভ্যুত্থান পরবর্তী একটি অগোছালো প্রশাসনকে নিয়মনীতির আলোকে গুছিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন বিচক্ষণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম। তিনি যোগদান করার পর আইন-শৃঙ্খলাসহ সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে ফিরে এসেছে। তার সুদক্ষ নেতৃত্বে উপজেলার বিভিন্ন দাপ্তরিক কর্মকান্ড যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে- এমনটাই জানিয়েছেন বিভিন্ন সেকশনে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
একটি উপজেলাকে আদর্শ উপজেলা হিসেবে রুপ দিতে সর্বপ্রথম মনোযোগ দিতে হয় শিক্ষায়। আর এখানেই বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম। গত বছরের ৫ আগস্টের পরে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশে বিপর্যয় নেমে আসে। তার যোগদানের পরে তার কর্মদক্ষতায় উপজেলার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে এসেছে।
শুধু তাই নয়, ২০২৫ সনের এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা শতভাগ নকলমুক্ত, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার ফলে উপজেলার শিক্ষক সমাজের কাছে ইউএনও আমিনুল একটি আলাদা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বলছেন- ইউএনও স্যার বাউফলে আসার পরে পরীক্ষায় কোনো ধরনের নকল করার সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া অতীতের চেয়ে ভালো পরিবেশে পরীক্ষা হচ্ছে।
বলা হয়ে থাকে রাষ্ট্রের প্রাণ রাজস্ব। এই রাজস্বের কল্যাণেই রাষ্ট্র তার স্বাভাবিক কর্মকান্ড পরিচালিত করে জনসেবা নিশ্চিত করতে পারে। এমন বাস্তবতায় সেদিকেই নজর দিয়েছেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। তার একান্ত প্রচেষ্টা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে বাউফল উপজেলার বাংলা ১৪৩২ সনের হাট-বাজার ও খেয়াঘাট ইজারার মাধ্যমে অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় করা হয়েছে, যা বাউফল উপজেলা ইতিহাসে বিরল।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ঐতিহ্যবাহী কালাইয়া হাট-বাজারের কথা। গত বাংলা ১৪৩১ সনে ইজারা মূল্য ১,৫৫,০০,০০০/-( এককোটি পঞ্চান্ন লক্ষ) টাকা ছিল। আর চলতি বছর (বাংলা ১৪৩২ সনে) ইজারা হয়েছে ৩,৮১,৫০,০০০/- (তিনকোটি একাশি লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা, যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি। এভাবে সকল হাট-বাজার ও খেয়াঘাট গত বছরের তুলনায় দ্বিগুনেরও বেশি মূল্যে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ইজারা দিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি করেছেন আমিনুল।
ইউএনও আমিনুল ইসলামের সততায় বাউফলের সকল সরকারি বরাদ্দের সুষম বন্টন হয়েছে। তাঁর বিচক্ষণ নেতৃত্বের ফলে এ উপজেলার উন্নয়ন কার্যক্রম সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। ফলে বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাৎ ও অব্যবহারে রাস্তা বন্ধ হয়েছে। এমনকি তার একান্ত প্রচেষ্টা ও বুদ্ধিমত্তায় সরকারি সব ধরণের ভাতা সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে প্রকৃত ব্যক্তিকে প্রদান করা হচ্ছে। ফলে বাউফলবাসী তাঁর প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছেন।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাউফল পৌরসভার প্রশাসকও বটে। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে পৌরসভার স্থবির কার্যক্রমকে গতিশীল করেছেন। যেসব প্লান অনুমোদন পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পৌরবাসী ভোগান্তিতে ছিল। প্লান পাস করে সেই ভোগান্তি থেকেও তিনি পৌরবাসীকে রক্ষা করেছেন। বাউফল পৌরসভার সেবা সহজীকরণ ও স্বল্প সময়ে নিষ্পত্তি করার ফলে পৌরবাসী তার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
বাউফলের পূর্ব সানেশ্বর দাখিল মাদরাসার সুপার এএফএম ফরিদ উদ্দিন, ভরিপাশা সৈয়দ মর্তুজা দাখিল মাদরাসার সুপার মো.জাকারিয়া ও কারখানা আলিম মাদরাসার প্রিন্সিপাল মো.হাবিবুর রহমান বলেন, ইউএনও আমিনুল ইসলাম স্যারকে পেয়ে আমরা বাউফলবাসী গর্বিত। গত বছরের ৫ আগস্টের পরে উপজেলার আইনশৃঙ্খলাসহ সব সেক্টরের সেবা স্থবির হয়ে পরে। আমিনুল স্যারের বিচক্ষণ নেতৃত্বে অভ্যুত্থানপরবর্তী একটি অগোছালো পৌরসভা, উপজেলা পরিষদসহ অন্যান্য দপ্তরের সেবাকার্যক্রম পুরোদমে সচল হয়েছে। তার সুদক্ষ নেতৃত্বের ফলে নকলমুক্ত শিক্ষার পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাউফল উপজেলায়।
পৌরসভার কয়েকজন অটোরিকশা চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাউফল পৌরসভায় দীর্ঘদিন যাবত চলা চাঁদাবাজি কঠোর হাতে দমন করেছেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে বাউফলপৌরসভা বাসিন্দাদের মাঝেও। কেননা তারা আগে অর্থাৎ যখন চাঁদাবাজি চলমান ছিলো তখন যেখানে অটোভাড়া ছিলো ১০ টাকা আজ সেটি কমে হয়েছে ৫টাকা। সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়ায় এর সুফল বিভিন্নভাবে পাচ্ছেন উপজেলাবাসী।
এছাড়া বাউফলের বিভিন্ন ইউনিয়নের বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা ও প্রতিবন্ধীভাতাভোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ইউএনও আমিনুল ইসলাম বাউফলে আসার পর থেকে প্রকৃত ভাতা প্রত্যাশিরা কোনো ধরনের ঘুষ কিংবা উৎকোচ না দিয়েই তারা ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন। অথচ এর আগে একেক নাম প্রতি দিতে হতো ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা, যা আজ সম্পূর্ণরুপে বন্ধ।
বাউফল পৌরসভার বাসিন্দা মশিউর রহমান মিলন, আবু রায়হান, সবুজ সরকার, রাশিদুল ইসলাম এজাজ বলেন, ৫ আগষ্টের পরে বাউফল পৌরসভার সকল কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে পরে। পৌরবাসীর ভোগান্তি বেড়ে যায়। আমাদের ইউএনও আমিনুল স্যার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে স্থবির হওয়া পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্প সক্রিয় হয়েছে, যার ফলে আমাদের অনেক দুর্ভোগ কমে গেছে।
বাউফলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মোশাররফ হোসেন খান, একেএম মিজানুর রহমান, আবদুল মোমেন গাঝি, রেজাউল করিম, আবু খালেদ মোহাম্মাদ শহিদুল ইসলাম, মো. লোকমান, মো. জাকির হোসেন ওহিদি, মো. নজরুল ইসলাম, মো. আবু ইউসুফ একযোগে বলেন, ইউএনও আমিনুল স্যার বাউফলে আসার পর থেকে বাউফলের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে। তিনি শিক্ষাবান্ধব একজন ইউএনও। তার নেতৃত্বে উপজেলার শিক্ষা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে বেহাল দশার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কারের মাধ্যমে। তিনি ভঙ্গুর ও ঝুকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে ফিরিয়ে এনেছেন শিক্ষার আদর্শিক পরিবেশ।
এছাড়া বাউফলে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাদকনিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন ইউএনও আমিনুল ইসলাম। বাউফলের অন্যতম সমস্যা জলমহল ও বালু মহল থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে খাস আদায় করেছেন। এভাবে তিনি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের সেবা নিশ্চিত করে কাজের গতি ফিরিয়ে এনেছেন। এমন বাস্তবতায় সচেতন মহল বলছেন- ইউএনও আমিনুলের ছোঁয়ায় চব্বিশের আগষ্ট পরবর্তী অগোছালো এক বাউফল শৃঙ্খলে ফিরে বদলে গেছে চিত্র!
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি প্রজাতন্ত্রের একজন সেবকমাত্র। আমি আমার জায়গা থেকে রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাউফলকে একটি আদর্শ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আমার চেষ্টা চলমান থাকবে। সেক্ষেত্রে উপজেলার সচেতন নাগরিকদের সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।
Leave a Reply