বাউফল প্রতিদিন ডট কম

বাউফলের কথা বলে

আজ বাউফলের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব নজরুল সিকদারের মৃত্যুবার্ষিকী

আরিফুল ইসলাম সাগর :

বাবা শুধু একটা শব্দ না। এটা একটা ছায়া, একটা আশ্রয়, একটা নির্ভরতা। যে ছায়ায় দাঁড়িয়ে জীবনকে যতটা কঠিন মনে হয়, ততটাই সহজও লাগে। ছোটবেলা থেকে বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়া, তার কাঁধে চড়ে মেলায় ঘোরা, বাবার প্রতিষ্ঠানে যাওয়া,কানে কানে গল্প শোনা এই সব স্মৃতি তখন কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও, হারানোর পর বুঝেছি কতটা অমূল্য ছিল সবকিছু।

২০১৫ সাল, আমি তখন এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে একটু নিঃশ্বাস নিতে ঢাকায় চাচার বাসায় বেড়াতে যাই। মাথায় তখন হাজারো স্বপ্ন, পরীক্ষা শেষ হয়েছে বলে মনে হচ্ছিল জীবনটা নতুন করে শুরু হচ্ছে। কিন্তু কে জানত, সেই শুরুটা হবে এক অসীম শূন্যতার যাত্রা?

ঢাকায় আসার ক’দিনের মধ্যেই খবর পেলাম বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছি। প্রথমে বুঝিনি ব্যাপারটা কতটা গুরুতর। ভাবলাম, হয়তো সর্দি-জ্বর বা প্রেসারের সমস্যা। কিন্তু না, বিষয়টা ছিল ভয়ংকর। ১২ এপ্রিল, খবর এল বাবাকে দ্রুত বরিশালের শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ডাক্তাররা বললেন, তার প্রেসার খুব নিচে নেমে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ‘পেসমেকার সাপোর্ট’ দরকার। কিন্তু সে সময় বরিশালে ছিল না সেই চিকিৎসা ব্যবস্থা।

রাত তখন গভীর, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুরু হলো বাবাকে ঢাকায় আনার প্রস্তুতি। অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা হলেন মা ও বাবার সঙ্গে কয়েকজন আত্মীয়। আমি তখন ঢাকায়, চাচার বাসায়। কিছু করতে পারছিলাম না, শুধু ফোনের ওপাশে কান পেতে ছিলাম কী হয়, কী না হয় সেই অপেক্ষায়।

অবশেষে খবর এল বাবা আর নেই। মাওয়া ফেরিতে ওঠার পর, অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি।এক মুহূর্তে যেন সব থমকে গেল। আমার পৃথিবীটা গুঁড়িয়ে গেল একদম চুপচাপ, নিঃশব্দে। আমি বাবাকে জীবিত অবস্থায় শেষবারের মতো দেখতে পারিনি, ছুঁতে পারিনি, কথা বলতে পারিনি,তাকে ধরে কাঁদতেও পারিনি।

এরপর কেটে গেছে দশটা বছর। প্রতিটা বছর যেন ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ কাটা একটা বেদনার নাম। স্কুল থেকে কলেজ, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সব অর্জনের দিনগুলোয় পাশে ছিলো না আমার বাবা। জীবনের অনেক বাঁকে থেমে গেছি শুধু একটা হাতের অভাবে। আজও মনে হয়, বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো সাহসটা আরও একটু বেশি থাকত, বিশ্বাসটা আরও শক্ত হতো।

জীবনের যেকোনো ভুল, যেকোনো ব্যর্থতা বাবা সামলে নেবে এই বিশ্বাসটা হারিয়েছি আমি ২০১৫ সালের সেই এপ্রিলের রাতে।

আজ, এক দশক পরেও আমি বাবার সেই উষ্ণ চোখের চাহনি খুঁজি, খুঁজি সেই কণ্ঠস্বর যেটা বলত, চিন্তা করিস না, আমি আছি।কিন্তু আমি জানি, সেই কণ্ঠ আর ফিরবে না। তবুও আমি বাঁচি, আমি হাঁটি, কারণ আমার রক্তে বইছে আমার বাবারই সাহস।

উল্লেখ্য, আজ ১৩ এপ্রিল বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম সিকদারের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী।

পরিচিতি: গণমাধ্যমকর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *