বাউফল প্রতিদিন ডট কম

বাউফলের কথা বলে

সংগ্রামী ইউনুস ভাই মরেও বাঁচালেন অনেককে : অ্যাডভোকেট শাহিন

মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন: ইউনুস ভাই, আপনি মরে গিয়ে বেঁচে গেছেন, অনেককে বাঁচিয়েও দিয়েছেন।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ অন্যান্য মামলায় আপনাকে আর কোর্টে কোর্টে হাজিরা দিতে হবে না, রাতের বেলা পুলিশের ভয়ে মসজিদে গিয়ে বসে থেকে মশার কামড় খেতে হবে না, এ বাড়ি ওবাড়ি রাত কাটাতে হবে না। রাত ২/৩ টার সময় আমাকে ফোন করে আপনার ঘুম ভাঙাতে হবে না যে বাউফল থেকে পুলিশ যাচ্ছে আপনি নিরাপদে কোথাও যান। আপনার মেয়ের HSC পরীক্ষার সময়ও স্থানীয় নেতাদের সহায়তায় আপনাকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বাহিনী গ্রেফতার করেছে, মেয়েটা পিতার গ্রেফতার আতঙ্কের কারণে ঠিকভাবে পরীক্ষা দিতে পারেনি রেজাল্ট কিছুটা খারাপ করেছিল।

ফিরোজ এমপি, কামাল চেয়ারম্যান, লাবু বিশ্বাস গংদের আপনি বাঁচিয়ে দিয়েছেন, আপনাকে এলাকা ছাড়া করতে তাদের আর চিন্তা করতে হবে না, স্কুল থেকে আপনাকে সাসপেন্ড করার ভয় দেখাতে পারবে না, চাকুরী ফিরে পেতে কোর্টের দ্বারস্থ হতে হবে না।

আপনি আপনার মায়ের অনেক খেদমত করেছেন, বিছানায় পড়ে থাকা মায়ের নিজ হাতে সেবা করেছেন, মেয়েদেরকে মানুষ করার চেষ্টা করেছেন, মেয়ে আজ মেডিকেলে পড়ছে তাকে নিয়ে আর চিটাগাং যেতে হবে না।

এলাকার মানুষকে নিয়ে আপনার আর চিন্তা করতে হবে না, নগর বাজারের সকল ময়লা ঝাড়ু দিতে হবে না, ময়লাগুলো ভ্যান ভরে কোথাও ফেলে দিতে হবে না।

ইউনুস ভাই,

আপনি বেঁচে থাকলে আপনার এলাকার মানুষ অনেক উপকৃত হতো, ছাত্র-ছাত্রীরা ভাল ক্যারিয়ার করতে পারতো, বাবা-মায়েরা তাদের মেয়েদের নির্বিঘ্নে স্কুলে পাঠাতে পারতো, এলাকার মানুষ সালিশে ন্যায় বিচার পেত, পরিচ্ছন্ন এলাকা গড়তে পারতো, স্কুল-মাদ্রাসার দুর্নীতি বন্ধ হতো।

আপনি বেঁচে গেছেন ভাই, কিন্তু আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আপনার মত সৎ, বলিষ্ঠ, চরিত্রবান, পরোপকারী এবং নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ পাওয়া আজকের জামানায় খুব কঠিন। আপনি যে ভাল কাজগুলো করেছেন আল্লাহ তার প্রতিদান স্বরূপ আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস এর মেহমান বানিয়ে নিন।

উল্লেখ্য, ইউনূস মাস্টার নওমালা হাইস্কুলের জনপ্রিয় সিনিয়র শিক্ষক (গণিত) ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ অনেকগুলো মামলা করা হয়, স্কুল থেকে বারবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দেশে পান থেকে চুন খসলে মাওলানা ইসহাক এবং ইউনুস ভাইয়ের বাসায় পুলিশ হানা দিত, দুজনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছিল। স্কুলের সভাপতির চাপ, পুলিশের ডিস্টার্ব এ তিনি নওমালা হাইস্কুল ছেড়ে বরিশালের একটা হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষকের চাকুরী নিয়েছিলেন। স্ত্রী প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা হওয়ায়, মেয়ে স্কুলে পড়ায় তাকে প্রায়ই বরিশাল থেকে বাউফলে আসতে হতো। আর সেই আসার পথেই ঘাতক বাসের ধাক্কায় তিনি আহত হয়ে ইন্তেকাল করেন। সকাল ১১ টায় নওমালা হাইস্কুল মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

পরিচিতি: সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ সরকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *