বাউফল প্রতিদিন ডট কম

বাউফলের কথা বলে

বাউফলে প্রকৃত জেলেরা পাচ্ছে না চাল, স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নে মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির বিশেষ বরাদ্দের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রকৃত জেলেদের চাল না দিয়ে স্বজনপ্রীতি, বিত্তবান ও জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত না এমন ব্যক্তিদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়েছে। চাল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকৃত জেলেরা।

কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (৮ অক্টোবর) এই ইউনিয়নের নয়শ জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হয়। এ উপলক্ষে ইউপি সদস্যদের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত জেলেদের একদিন আগেই চাল নেওয়ার কার্ড সরবরাহ করা হয়।

কিন্তু তালিকাভুক্ত অনেক জেলেই চাল পায়নি। তাদের অভিযোগ, নিবন্ধিত জেলে না, এমন ব্যক্তিদের মাঝে চাল দেওয়া হয়েছে। যারা অন্য পেশায় জড়িত।

চরকালাইয়া গ্রামের জেলে মো. এনামুল বলেন, আমি একজন প্রকৃত জেলে। নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। কিন্তু আমি চাল পাইনি।

শৌলা গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিন হাওলাদার (৬৩) বলেন, শিশু বয়স থেকেই জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত। আমি সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলে। এই পেশার ওপর নির্ভরশীল আমার পরিবার। কিন্তু আমরা চাল পাই না। ২১ দিন নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কীভাবে সংসার চলবে সেই চিন্তায় কোনো কিছু ভালো লাগে না।

তিনি আরও বলেন, এই গ্রামে অন্তত আরও ২০ জন নিবন্ধিত জেলে আছে, যারা কেউ চাল পান না।

ওই গ্রামের নিবন্ধিত জেলে আবদুর রহমান (৪২), মো. ফিরোজ (৪০), আবদুল মন্নান (৪০), মো. জাফর হাওলাদার (৩৮) তারা সবাই বলেন, আমরা জেলে হয়েও চাল পাই না। অথচ ইউপি সদস্যদের কাছের লোকেরা চাল পায়। তারা এই অনিয়মের বিচার কার কাছে দেব?

সরেজমিনে দেখা গেছে, পূর্ব কালাইয়া গ্রামের মো. হাবিবুল্লাহ (৪০), মো. নিজাম (৩৫) ও মো. জলিল হাওলাদার (৫০) নামের তিন ব্যক্তি অটোরিকশায় করে ২৫ কেজি করে মোট আটজনের ২০০ কেজি চাল নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তাদের কেউ জেলে না। কীভাবে চাল পেলেন এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তারা চলে যান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালাইয়া বন্দরের কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা মো. হারুন মিয়ার এক মেয়ে ঝুমুর আক্তারকে জেলেদের চাল দেওয়া হয়েছে। হারুন পেশায় একজন শ্রমিক। ওই পরিবারের কেউ জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত না।

একই এলাকার মো. মনির, মো. সালাম, আদর্শ গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী ছোট মনির জেলেদের নামের চাল পেয়েছেন। তারা কেউ-ই জেলে না।

কালাইয়া এলাকার মো. শাহজাহান হাওলাদার বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা জেলে না হলেও আওয়ামী লীগের কর্মী এমন ব্যক্তিদের চাল দেওয়া হতো। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক হলেও তার দোসর ইউপি সদস্যরা এখনও বহাল তবিয়তে আছেন। তারা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে সেই প্রথা এখনও চালু রেখেছেন। এতে প্রকৃত জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

কালাইয়া ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ হাওলাদার বলেন, তালিকায় যাদের নাম ছিল, তারাই চাল পেয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলেদের চাল অন্য পেশার কেউ পাওয়ার সুযোগ নেই। এমন অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *