বাউফল প্রতিদিন ডট কম

বাউফলের কথা বলে

পটুয়াখালীর লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল, সরকারি জমি দখল যেন বিএনপির মগের মুল্লুক!

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পটুয়াখালীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড ও সরকারি জমি দখল করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে জেলা কমিটির সদস্যসচিবের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সম্প্রতি পটুয়াখালী শহরের লাউকাঠি নদীর তীরে সরকারি জমি নিজের দখলে নিতে ঘর তৈরির কাজ শুরু করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব স্নেহাংশ সরকার কুট্টি। ২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নদীর তীরভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সে সময়ে কুট্টি সরকারের অফিস ঘরটিও অপসারণ করা হয়েছিল। তবে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই উচ্ছেদ করা জায়গায় আবারও স্থাপনা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে স্নেহাংশু সরকার কুট্টি বলেন, ‘ওটা জেলা প্রশাসনের জায়গা নয়, আমার জায়গা। আমি কিনেছিলাম। ওখানে আমি হাইকোর্টের রায়ও পেয়েছি। তবু আমি বিএনপি করি বিধায় ওই সময়ে জেলা প্রশাসন আমারটাই ভেঙেছে, অন্য কারও ঘর ভাঙেনি।’

এ ছাড়া পটুয়াখালীর বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের অন্ধ কল্যাণ সমিতির আজীবন সদস্যদের সরাসরি ভোটে কার্যকরী পরিষদ নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও কয়েক বছর ধরে সেটি তৎকালীন সরকারদলীয় নেতাদের দখলে ছিল। সরকার পতনের পর কমিটির নেতারা গা ঢাকা দেওয়ায় হাসপাতালটির কমিটি দখলে নিয়েছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা।

জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও অন্ধ কল্যাণ সমিতির আজীবন সদস্য তৌফিক আলী খান কবির বলেন, ‘আমার বাবা সাবেক সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন। আমি নিজেও আজীবন সদস্য। দীর্ঘ ১৬ বছর আওয়ামী লীগ এটাকে দখল করে রেখেছিল। আমি এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দখলমুক্ত চাই। আজীবন ও সাধারণ সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে পটুয়াখালী বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল সুন্দরভাবে জনগণকে সেবা প্রদান করবে, সেটা প্রত্যাশা করি।’

এ বিষয়ে বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতালের ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সহসভাপতি সাধারণ সভা করে একটা কমিটি করে দিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালনার জন্য। এ ছাড়া গত ২ তারিখে একটি গ্রুপ হাসপাতালের কাগজপত্র ও সিসিটিভি ক্যামেরার মেশিন নিয়ে যায়। তবে কাগজপত্র দিলেও সিসিটিভি ক্যামেরার মেশিন এখন পর্যন্ত দেয়নি।’

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কমিটির দাবি করা সভাপতি মোশতাক আহমেদ পিনু বলেন, ‘কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ গত ৫ আগস্টের পর পালিয়ে যাওয়ায় সহসভাপতি শফিকুর রহমান চান সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে একটি জরুরি সাধারণ সভা করে সবার সম্মতিক্রমে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন।’

এদিকে পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির কমিটি থাকলেও বর্তমান কমিটিকে হটিয়ে বাসস্ট্যান্ড দখলে নিয়েছেন বিএনপির নেতারা। গত ২৪ আগস্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির দুই সদস্য মো. বশির আহমেদ মৃধা সভাপতি ও খন্দকার ইমাম হোসেন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা পটুয়াখালী রুটের পূবালী-১২ লঞ্চের সুপারভাইজার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের লঞ্চের কোম্পানি থেকে নিয়োগ দেওয়া ঘাট সুপারভাইজার জসিম ভাই, তিনি শুরু থেকে আছেন। তবে গত ৫ আগস্টের পর বিপ্লব গাজী ঘাটে এসে বলেন, “জসিম এখন আর আসবেন না, তাঁর বিলটা এখন থেকে আমাদের দেবেন।” কি আর করার, আমরা বিপ্লব গাজীকে প্রতি ট্রিপে ২ হাজার টাকা দিই।’
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা যুবদলের সদস্য গাজী আশফাকুর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘আমরা ছয়টি লঞ্চের সুপারভাইজারের দায়িত্বে আছি। আমাদেরটা আমরা নিতে পারি না। স্থানীয় লোকজন নেন। সেখানে অন্যজনেরটা আমরা নিতে যাব কেন। এগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বক্তব্য।’

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. নুর কুতুবুল আলম বলেন, ‘লাউকাঠি নদীর তীরে উচ্ছেদ হওয়া জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে কি না, তা বলতে পারব না। তবে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বলেছিলেন, তাঁর হাইকোর্টের রায়ের কাগজ রয়েছে। পরে আমি তাঁকে আসতে বলেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কাগজ নিয়ে আসেননি।’

আজকের পত্রিকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *