বাউফলে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক রোগীদের খাদ্য সরবরাহে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগীদের অভিযোগ, খাদ্যতালিকা অনুযায়ী খাবার দেওয়া হয় না।
মাছের তালিকায় ইলিশ, রুই ও সিলভার কার্প থাকলেও দেওয়া হয় পাঙাশ। যা পরিমাণেও কম। খাবারের মানও নিম্নমানের।
গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রান্নাঘরে দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য পাঙাশ রান্না করছেন দুই রাঁধুনি। নোংরা পরিবেশে রান্না করা হচ্ছে এসব খাবার।
যদিও শিডিউল অনুযায়ী ইলিশ, রুই অথবা সিলভার কার্প মাছ দেওয়ার কথা। তবে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি দায়িত্বে থাকা রাঁধুনি।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন সকালের নাশতাসহ দুপুর ও রাতের খাবারের জন্য বরাদ্দ ১৭৫ টাকা। নাশতার জন্য বরাদ্দ ৫০ টাকা। এ টাকায় একটি ডিম, সরবি কলা ও রুটি দিতে হবে।
আর দুপুর ও রাতের জন্য বরাদ্দ ১২৫ টাকা। প্রতি কেজি ইলিশ মাছের দাম ১০০০ টাকা, রুই ৩০০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০ ও ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা ধরা হয়েছে।
সপ্তাহে তিন দিন মাংস ও আর চার দিন মাছ দেওয়ার কথা। তবে বেশিরভাগ সময়ই দেওয়া হয় পাঙাশ মাছ। সবজির জন্য লাউ, গোল আলু, কাঁচা পেঁপে ও মিষ্টিকুমড়ার জন্য বরাদ্দ ৩৫ টাকা।
খাবার সরবরাহের জন্য দায়িত্ব পান দশমিনার আ. হক নামে এক ঠিকাদার। পরে চুক্তিতে খাবার সরবরাহ করছেন বাউফলের ওহাব মৃধা নামে এক সাব-ঠিকাদার।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীরা বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করা হয় না। সকালে নিম্নমানের নাশতা, দুপুর ও রাতে অধিকাংশ সময় পাঙাশ মাছ দেওয়া হয়। যে সবজি দেওয়া হয় তা পরিমাণে খুবই কম।’
উপজেলার তাঁতেরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা বেগম বলেন, ‘তার দুই সন্তান অসুস্থ। তারা ৭ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। এই ৭ দিনের ৪ দিনই দুপুর ও রাতের খাবারে পাঙাশ মাছ দেওয়া হয়েছে। বাকি দিন ব্রয়লার মুরগি।’
পৌর শহরের বাসিন্দা সদর মো. মকবুল গাজী বুকে ব্যথা নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তিন দিনের মধ্যে দুই দিন দুপুর ও রাতে দেওয়া হয়েছে পাঙাশ মাছ আর এক দিন ব্রয়লার মুরগি।’
আবদুল হালিম মৃধা নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘তার বাবা ১৭ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি তার বাবার সাথেই থাকেন। হাসপাতালের যে খাবার দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত নিম্নমানের দাবি করে তিনি বলেন, প্রায় বেলায় পাঙাশ মাছ দেওয়া হয়। একই অভিযোগ করেন হাসপাতালে ভর্তি থাকা একাধিক রোগী ও তার স্বজনরা।
তারা বলেন, অনেক রোগী পাঙাশ মাছ খেতে পারেন না। এতে অনেকে বাইরে থেকে আনা খাবার খেয়ে থাকেন। যাদের বাইরে থেকে খাবার আনা সম্ভব হয় না, তারা বাধ্য হয়েই হাসপাতালের এসব খাবার খেয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে বরাদ্দের বড় অংশ আত্মসাৎ করেন ঠিকাদার। ওই টাকার ভাগ হাসপাতালের কর্তাবাবুও পান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সরবরাহকারী ওহাব মৃধা বলেন, প্রতিদিন ১৭৫ টাকা বরাদ্দ। যাতে ১২-১৩ শতাংশ ভ্যাট ও অফিস খরচ দেওয়ার পরে ১৩০-১৪০ টাকা থাকে; যা দিয়ে তিনবেলা খাওয়ানো কীভাবে সম্ভব। তার পরও ভালো খাবার সরবরাহ করতে চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সাহার কার্যালয় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে চেষ্টা করেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. আবদুর রউফ বলেন, খাবারের মানোন্নয়নে কাজ করছি। যে অভিযোগ পেয়েছি, তা খতিয়ে দেখা হবে।
তিনি আরও বলেন, রান্নাঘর দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয়নি। সবশেষ দেড় কোটি টাকায় হাসপাতাল সংস্কারকাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। রান্নাঘর সংস্কার করার জন্য ঠিকাদারকে একাধিকবার বলার পরও তিনি কাজ করেননি।
Leave a Reply